Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বারোমাস আম চাষ

 বারোমাস আম চাষ
ড. মোঃ মেহেদী মাসুদ 
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিচিত্র রূপের অপরূপ সমারোহের সম্ভারে সমৃদ্ধ বাংলার আদিগন্ত মাঠ-ঘাট, প্রান্তর। ফল উপযোগী অনুকূল আবহাওয়ার প্রভাবে দুই দশকে বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশে^ মৌসুমি ফল উৎপাদনে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের হয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান। 
আম হলো ফলের রাজা। পুষ্টি, স্বাদ বা গন্ধে, বর্ণে অতুলনীয় আম নামক ফলটির জুড়ি মেলা ভার। সময়ের সাথে সাথে এ ফলটি হয়ে উঠছে অধিকতর চাহিদাসম্পন্ন। অপ্রতিদ¦ন্দ্বী চাহিদাসম্পন্ন এ ফল শুধুমাত্র বাড়ির আঙ্গিনায় নয় বরং ফলবাগানের শোভা বর্ধনের জন্য ফল সজ্জিত মিয়াজাকি বা বারোমাসী কাটিমনই যথেষ্ট। 
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই আম ভালো জন্মে, তবে পার্বত্য অঞ্চল আগাম জাতের আমের জন্য ভালো। ফলের মধুমাসের আগেই পাকা আমের আনাগোনা ফল পিপাসুদের মুগ্ধ করে। বলা যায় মে মাসেই আমের আগাম জাত চৈতী, বৈশাখী, সুড়ৎ বোম্বাই, গোলাপখাস, গোবিন্দভোগ, লক্ষণভোগ জাতের আমের ফল পাকতে থাকে। চৈতী আগাম জাতের আম বলে বাজারে এ আমের বেশ চাহিদা থাকে। আমের আরেকটি আশু জাত বৈশাখী। বৈশাখ মাসে পাকে বলেই এ আমের নামকরণ করা হয়েছে বৈশাখী। পাতলা আঁটির আঁশহীন, সুস্বাদু এ জাতটির শেল্ফ লাইফ তুলনামূলকভাবে বেশি। মাঝারি আকারের এ আমগুলোর ৪-৫ টিতে ১ কেজি হয়ে থাকে। আরেকটি আগাম জাত সুড়ৎ বোম্বই; জাতটি আকারে ছোটো হলেও আঁটি পাতলা হওয়ায় ভক্ষণশীল অংশের পরিমাণ বেশি। শাঁস কমলা বর্ণের, সুগন্ধী ও আঁশহীন। গোলাপখাস; পাকা আম থেকে গোলাপ ফুলের ন্যায় গন্ধ পাওয়া যায় বলে এ জাতটির নাম গোলাপখাস। মাঝারি আকৃতির গোলাপখাস জাতের আম কিছুটা লম্বাকৃতি। অতি আগাম জাত হওয়ায় বাজারে এ জাতের চাহিদা বেশ। পাকা ফল দেখতে সুন্দর কিন্তু স্বাদে সামান্য টক-মিষ্টি। গোবিন্দভোগ জাতটি বাংলাদেশে প্রাপ্ত আগাম আশু জাতের আমের মাঝে উল্লেখ করার মতো মিষ্টি। উৎকৃষ্ট জাতের এ আম সাতক্ষীরা ও যশোর জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ আম মে মাসের শুরুর দিকে পরিপক্ব হতে এবং মাঝামাঝিতে পাকতে শুরু করে। এবার বলা যাক লক্ষণভোগের কথা। লখনা নামেও এ জাত বেশ সমাদৃত। প্রতি বছরই ফল দিতে সক্ষম বলে লক্ষণভোগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন উপযোগী জাত। ফলের আকৃতি উপবৃত্তাকার। চামড়া পুরু হলেও আঁটি পাতলা, স্বাদ, সুগন্ধে অতুলনীয় অগ্রিম এ আমের জাতের বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। রাজশাহী, নাটোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ জাত বেশি জন্মে থাকে।
আমের মৌসুমি জাতের কথা আসতেই মনে পড়ে যায় গ্রীষ্মকালীন ছুটির বিষয়টি। এ সময়ে পাকা-কাঁচা ফলের সমাহারে বাংলার প্রকৃতি সুশোভিত হয়ে উঠে। এ সময়কালে উল্লেখ করার মতো আমের জাতগুলোর মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে ল্যাংড়া, আ¤্রপালী, হিমসাগর, ব্যানানা ম্যাংগো, হাঁড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ, রাণীপছন্দ আম। কথিত আছে, পায়ে সমস্যাগ্রস্ত এক ফকিরবাবা প্রথম ল্যাংড়া আমের চাষ শুরু করেন বলে এ জাতটি এমন অদ্ভুত নামের অধিকারী। মাঝারি আকৃতির এ ফলের স্বাদ অতুলনীয়। ডিম্বাকার- গোলাকৃতির কাঁচা আমের গন্ধও আকর্ষণীয়। শাঁস রসাল, সুগন্ধযুক্ত, ছোটো আটির উৎকৃষ্ট এ জাত আমাদের দেশে অতি জনপ্রিয়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়ায় প্রচুর পরিমাণে ফজলি আম জন্মে। গড় ওজন ৬১০ গ্রাম হলেও এর ওজন ১ কেজিও হয়ে থাকে। হলুদ শাঁস, আঁশহীন, রসাল, সুস্বাদু এ আমের আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা, পাতলা। জুলাইয়ের ১ম সপ্তাহ থেকে ফজলি আম পাকা শুরু হয়। 
বাংলাদেশের অতি পরিচিত ও সারাবিশে^ সমাদৃত আমের জাত হাঁড়িভাঙ্গা। এ আমের উৎপত্তি রংপুর জেলায়। এর গাছের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার মতো। গাছের ডালপালা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার চেয়ে পাশে বেশি বিস্তৃত হয়। ফলে ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে না এবং আমও তুলনামূলকভাবে কম ঝরে। হিমসাগর পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত আম হলেও আঁশহীন, মিষ্টি স্বাদ ও গন্ধের জন্য সারা পৃথিবীতে এ আম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে থাকে। জুন মাসের শেষে এ আম বাজারে আসে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় এ আমের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে থাকে। আ¤্রপালি জাতটি সত্তরের দশকে ‘দশেরি’ ও ’নিলম’ জাতের সংকরায়নে ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়। পরবর্তীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এনামুল হক ও চুয়াডাঙ্গার হাইব্রিড নার্সারির কর্ণধার আবুল কালাম আজাদ যৌথভাবে আ¤্রপালি জাতটি বাংলাদেশে আমদানি করেন। এজাত প্রতি বছরই ফল দিতে সক্ষম বলে সফলতার সাথে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত আমের ৩০ভাগই আ¤্রপালি। গাছের গঠন ছোট, এর মিষ্টতা ল্যাংড়া বা হিমসাগর হতে বেশি। এ ফল পাকলে গাঢ় কমলা-লাল ধারণ করে, ভিটামিন ’এ’ এর পরিমাণ বেশি। দিনকে দিন বিদেশী যে কয় জাতের আমের গ্রহণযোগ্যতা চোখে পরার মতো তার মাঝে ব্যানানা ম্যাংগো একটি। থাই এ জাতটি বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ি অঞ্চলে ও আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বাড়ির আংগিনা বা ছাদবাগানে কলা সদৃশ এ জাত বাগানের জন্য শোভাবর্ধক। পাকা আম ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। আকার আকৃতি আকর্ষণীয় ও স্বাদ-গন্ধ অতুলনীয়, পাকা ফল দুধ আলতা রং এসব বিশেষত্বের কারণে এ আমের বাজার মূল্য বেশি হয়ে থাকে। গোপালভোগ আমের জাতটি খুব অল্প সময় বাজারে পাওয়া যায়। এ জাতটি দেশের প্রায় সব জেলাতেই জন্মে। আমের খোসা মোটা তবে আটি পাতলা হয়ে থাকে। গোলাকৃতি এ আম কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলুদ- লালচে রঙের হয়। উল্লেখ্য, আমের রাজা বলে খ্যাত ল্যাংড়া আমের পরেই এ জাতের অবস্থান। 
নাবীজাতের বারি আম-৪ উচ্চফলনশীল নাবী এ জাতটি সারাদেশে চাষোপযোগী। বাজারে নাবীজাতের আমের মাঝে অন্যতম স্থানের অধিকারী গৌড়মতি আম। বাংলার প্রাচীন জনপথ ’গৌড়’ ও মূল্য বিবেচনায় মতি; যা একত্রে গৌড়মতি। অতি মিষ্ট, সুঘ্রাণযুক্ত এ জাতটি অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাওয়া যায়, অসময়ের ফল বলে বাজারমূল্য আমচাষির অনুকূলে থাকে। আরেকটি নাবীজাত জাদুভোগ। ৪০০ বছর আগে ভোলাহাটের নাম ছিল জাদুনগর। ভোলাহাট উপজেলায় এখনো ১টি গ্রামের নাম জাদুনগর। এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ভোগ মিলিয়ে এ জাতের নামকরণ করা হয় জাদুভোগ। ৮-১০ বছর বয়সি এ গাছ থেকে প্রায় ৫-৭ মণ আম পাওয়া যেতে পারে। ঝিনুক আশি^না হলো সব থেকে নাবী জাত। ওজন প্রায় ফজলি আমের মতো হয়ে থাকে, তবে এর একটি জাত আকারে ছোটো ও ঝিনুক সদৃশ হওয়ায় এর নাম ঝিনুক আশি^না। অসময়ের আম হওয়ায় এর বাজার দাম বেশি হয়ে থাকে।
আশা করা যায়, আগামী ৫ বছরের মাঝে সারা বছর আম            পাওয়া সম্ভব হবে। এসময় কালে স্বল্প পরিসরে আমের প্রাপ্যতা সহজতর করেছে বারমাসী জাতের বারি আম-১১ ও কাটিমন জাতের আম।
বারি আম-১১ জাতটি সারাদেশেই চাষ করা যায়। উচ্চফলনশীল এজাতটি আঁশহীন, সুস্বাদু। পাকা অবস্থায় গাঢ় হলদে, গড় ওজন প্রায় ৩১৭ গ্রাম। ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ফল সংগ্রহ সম্ভব এবং অফ সিজন হওয়ায় আমের বাজার মূল্য বেশি থাকে। বহুবছর ফেনী সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার এ জাতের সহজপ্রাপ্যতা ছিল, এ ছাড়াও পার্বত্য তিন জেলার হর্টিকালচার সেন্টারে বারি আম-১১ জাতের গাছ আছে। কাটিমন থাই ভ্যারাইটি। স্থানীয়ভাবে একে অমৃত নামেও ডাকা হয়। যেকোন বারমাসী আমের জাতের মাঝে এ জাত আঁশহীন সেরা জাত। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে মুকুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন ও জুলাই-আগস্ট আম পাকে এবং সংগ্রোহের উপযোগী হয়। তবে, মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত যেহেতু বাজারে আমের প্রচলিত অনেক জাতের সম্ভার থাকে সেই বিবেচনায় ফেব্রুয়ারি মাসের মুকুল ভেঙ্গে দিয়ে অসময়ের অধিক আম প্রাপ্যতা সহজ করার মাধ্যমে আমের ফলন ও মূল্য উভয়েই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উচ্চফলনশীল এ জাতটির প্রতিটি আমের ওজন ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম এবং প্রতি থোকায় প্রায় ৫-৬ টি আম থাকে। এ আমগাছ থেকে সারাবছরই ফুল, ফল ও পাকা আম পাওয়া যায় বলে আমের জগতে এ জাতটি অপার সম্ভাবনাময়। যদিও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালোয়েশিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের আবাদ করা হয় এবং বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ একইভাবে বাণিজ্যিক আবাদ ও রপ্তানির সাথে যুক্ত হতে পারে। বিশ^ বাজারে সমাদৃত অন্যতম দামি জাপানি আম মিয়াজাকি (সূর্যডিম) বা লাল আম। অনেকে শখের বশে ছাদবাগানে মিয়াজাকি আমের চাষ করছেন। আশার কথা এই যে, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে এ জাতের আমের চাষ শুরু হয়েছে। অনেক দেশে এ আম ৫০০০- ৬০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
পরিশেষে, আমের উৎপাদনের সাথে জড়িত আমচাষি, মধ্যস্বত্বভোগী, আমের ব্যবসায়ী সকলকে দেশ মাতৃকার কথাভেবে শুধুমাত্র অধিক মুনাফার আশায় অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, বালাইনাশক প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে তাহলে আমের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে পারে, অন্যদিকে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারে।

লেখক : প্রকল্প পরিচালক, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৬২৬০৬৯৫ ইমেইল : ঢ়ফুৎভঢ়@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon